বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:সত্যিই কি ভয়ঙ্কর হতে যাচ্ছে পশ্চিমবাংলার করোনা সংক্রমণ? বৃহস্পতিবার রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে যে তথ্যগুলি প্রকাশিত হয়েছে, তাতে এমন আশঙ্কার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এদিন শেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ১ হাজার ৬৯০ জন। এই সংক্রমণ করোনা সময়ে সর্বোচ্চ। যদিও করোনা সংক্রমিত অবস্থায় এখন চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৩ হাজার ৬৭৯ জন। এর ফলে রাজ্যে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা পৌঁছে গিয়েছে ৩৬ হাজার ১১৭ জনে। এ ছাড়া এদিন করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের। ফলে মোট মৃতের সংখ্যা পৌঁছে গিয়েছে ১ হাজার ২৩ জনে।
একই সঙ্গে করোনা সংক্রমণ থেকে সুস্থ হওয়ার সংখ্যাও একটু কমে গিয়েছে। এদিন মোট ৭৩৫ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। বুধবার সংখ্যাটা ছিল ৭৪৯ জন। ফলে রাজ্যে এখন মোট করোনা–মুক্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৪১৪ জন। স্বভাবতই সুস্থতার হার একটু কমে হয়েছে ৫৯.২৯ শতাংশ। শুধু রাজ্যই নয়, সারা ভারতেই এখন করোনা সংক্রমণ ভয়ঙ্কর ভাবে বাড়ছে। আর দেশের মহারাষ্ট্র, দিল্লি এবং তামিলনাড়ুর পর বাংলায়ও সংক্রমণের গতি মারাত্মক। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামিদিনগুলিতে দেশ তথা রাজ্যের অবস্থা কী হতে পারে, সে বিষয়ে একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল বেঙ্গালুরুর ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স (আইআইএসসি)। বলা বাহুল্য, সমীক্ষার ফল খুব একটা আশাপ্রদ নয়।
সমীক্ষার ফলে দেখা যাচ্ছে, সংক্রমণের হার বর্তমানের মতো হলে গোটা দেশের মতো এই রাজ্যেও সংক্রমণ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে। এই হিসেবে আগামী সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতেই রাজ্যে সংক্রমিত হতে পারেন ৫৯ হাজার ৩৪০ জন। সেই সময় রাজ্যে মৃতের সংখ্যা পৌঁছতে পারে ২ হাজার ৩৭০ জনে। সংক্রমিতদের মধ্যে তখন করোনা ভাইরাস সক্রিয় থাকবে ১৯ হাজার ৯০ জনের শরীরে। তখন সুস্থ হয়ে উঠবেন ৩৭ হাজার ৮ জন। এখানেই শেষ নয় আশঙ্কার তথ্য। সমীক্ষা অনুযায়ী, নভেম্বরের শুরুতে রাজ্যে সংক্রমিত হতে পারেন ২ লক্ষ ১ হাজার ৫৩০ জন। তাঁদের মধ্যে করোনা ভাইরাস সক্রিয় থাকবে ৫৪ হাজার ৯২০ জনের শরীরে। তবে তখন সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন ১ লক্ষ ৪৮ হাজার ১৩০ জন। সেই সময় মৃত্যুর সংখ্যা হতে পারে ৮ হাজার ৪৮০ জনের।
এই অবস্থার বদল না হলে জানুয়ারির প্রথমেই রাজ্যে সংক্রমিত হবেন ৪ লক্ষ ৯৭ হাজার ৭১০ জন। তাঁদের মধ্যে করোনা ভাইরাস সক্রিয় থাকতে পারে ১ লক্ষ ৪ হাজার ৪৪০ জনের শরীরে। সেই সময় ২২ হাজার ১০ জনে গিয়ে পৌঁছতে পারে মোট মৃত্যুর সংখ্যা। তবে তখন সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা ৩ লক্ষ ৭১ হাজার ২৬০ জনের। আবার, মার্চের শেষে রাজ্যে সংক্রমিতের সংখ্যা পৌঁছে যেতে পারে মোট ১০ লক্ষ ৪ হাজার জনে। তবে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা থাকতে পারে ১ লক্ষ ৩৮ হাজার ৫৬০ জনে। মোট মৃত্যুর সংখ্যা হতে পারে ৪৮ হাজার ৩৬০ জন। আর সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন ৮ লক্ষ ৫০ হাজার ২৬০ জন। রাজ্যের বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনও যদি রাজ্যের সাধারণ মানুষ সচেতন না হন, তা হলে রাজ্যের অবস্থা খারাপ হতে পারে। তাই রাজ্যবাসীকে সচেতন হওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।